ক্যাপ্টেন নরেন্দ্রনাথ দত্ত
বিক্রি করে যা পেত তার চেয়েও কিছু বেশি টাকা দেন তাকে। তাকে অঙ্গীকার করানো হয় যে আর কোনদিন বিনা অনুমতিতে কারও কোন জিনিস সে নিবে না বা খাবে না। হাঁড়িপাতিল বিক্রেতা সেদিন অঙ্গীকার করে বিদায় নিয়ে স্থান ত্যাগ করে।
ক্যাপ্টেন নরেন্দ্রনাথ দত্ত নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর সাথে কংগ্রেসের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেন। ১৯৩০ সালে সরকারের আইন অমান্য আন্দোলনে নেতাজীর সাথে রাজপথে মিছিলে অংশ গ্রহণ করার প্রাক্কালে পুলিশের লাঠিচার্জ্ থেকে নেতাজীকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজেও আহত হয়েছিলে। কুমিল্লর ডা. সুরেশচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় মেডিক্যাল কলেজে ক্যাপ্টেন নরেন্দ্র নাথ দত্তের সহপাঠী ছিলেন। ১৯২৩ সালে কুমিল্লায় অভয় আশ্রম প্রতিষ্ঠার সময় ডা. সুরেশচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় ক্যাপ্টেন দত্তের অর্থ সাহায্য পেয়েছিলেন। ১৯৩০ সালে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনে মাস্টার দাকে সহায়তাকারী কয়েকজন আসামীকে গোপনে ক্যাপ্টেন দত্ত কলকাতায় তাঁর বরাহনগর গোডাউনে দীর্ঘ দিন আশ্রয় দিয়েছিলেন।
স্বাধীনতার পরেস্বাধীনতার পরে কংগ্রেসের উর্ধ্বমহল ও ব্যবসায়ী মহলের সাথে মতের অমিল হওয়ায় প্রথম মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ড. প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষের(ঢাকার নবাবগঞ্জের কৈলাইলের সন্তান) পদত্যাগের পর যখন ডা. বিধানচন্দ্র রায় মুখ্যমন্ত্রী হন তখন তাঁর কেবিনেটে মন্ত্রী হিসাবে যোগদানের জন্য ক্যাপ্টেন দত্তকে তিনি আহবান করেছিলেন। ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের সে আহবান ক্যাপ্টেন নরেন্দ্রনাথ দত্ত বিনীতভাবে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
মৃত্যুর কিছুদিন আগে অর্থাৎ ১৯৪৮সালের ডিসেম্বরে ক্যাপ্টেন দত্ত কলকাতা থেকে গ্রামের বাড়ি শ্রীকাইল এসেছিলেন। তাঁর সকল সম্পত্তি বাণী দেবী ট্রাস্টে ন্যাস্ত করে যান। কুমিল্লা জেলার ডেপুটি কমিশনার হচ্ছেন বাণী দেবী ট্রাস্টের প্রধান। শ্রীকাইল থেকে কলকাতায় ফিরে ক্যাপ্টেন দত্ত অবহিত হন যে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার বেঙ্গল ইমিউনিটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন নরেন্দ্রনাথ দত্তের নামে মার্চ মাসের ২৩ তারিখ(১৯৪৯) আয়কর সংক্রান্ত একটি নোটিশ করেছেন, যাতে বলা হয়েছে বিগত ৮ বছরে(১৯৪০-৪৮) মোট ৫৮,২৪,০২৩ টাকা কর গোপন করা হয়েছে। শুদ্ধ ব্যবসায়ে অর্থ খাটিয়ে আয়ের পর নিয়মিত কর পরিশোধের পরেও আয়ের যে আয় হয়েছে তার কর দেওয়া হয়নি তা তিনি স্বীকার করেন। ক্যাপ্টেন দত্তের মৃত্যুর(১৯৪৯) পরে তাঁর উত্তরসূরিদের দ্বারা আদালতে আপীল করার পর ১৯৬০ সালে ৫২,৩৪,৬৬৩ টাকা পরিশোধের রায় হয়। ক্যাপ্টেন দত্তের উত্তরসুরীরা মামলার খরচসহ সমান ৮ কিস্তিতে সমুদয় টাকা পরিশোধ করেছিলেন।
১৯৪৯ সালের ৬ই এপ্রিল বিকাল তিনটায় তাঁর ধর্মতলার বাসায় বিশ্রাম নেওয়ার সময় তিনি হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হন। বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ৯টা ১৫ মিনিটের সময় চিরকুমার মনীষী ক্যাপ্টেন ডাক্তার নরেন্দ্রনাথ দত্ত মৃত্যুবরণ করেন।
No comments