মমিনুল ইসলাম মোল্লা: সাংবাদিকতা ও শিক্ষকতার এক নিবেদিত জীবন।।
মমিনুল ইসলাম মোল্লা: সাংবাদিকতা ও শিক্ষকতার এক নিবেদিত জীবন।।
স্টাফ রিপোর্টার :
একাধারে একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক, শিক্ষক, ফিচার লেখক, এবং কলামিস্ট। দীর্ঘ ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত। কুমিল্লার দেবীদ্বারের এই কৃতি সন্তান প্রিন্ট, অনলাইন ও রেডিও সাংবাদিকতায় তার লেখনীর ছাপ রেখেছেন। পেশাগত জীবনে তিনি একজন শিক্ষক হিসেবেও কর্মরত আছেন, যা তার লেখায় ভিন্ন এক মাত্রা যোগ করেছে।
সাংবাদিকতা জীবনের ২৫ বছর
মমিনুল ইসলাম মোল্লার সাংবাদিকতার পথচলা শুরু হয় ১৯৯২ সালে, যখন তার প্রথম ফিচার "চাঁদপুরের লঞ্চ দুর্ঘটনা" নিয়ে প্রকাশিত হয়। সেই থেকে তিনি প্রায় শতাধিক পত্রিকায় লিখেছেন এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, দেশের ১৫৩টি নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকার মধ্যে ১০১টির সাথে তিনি সরাসরি যুক্ত রয়েছেন। তার মতে, বিভিন্ন রুচি ও আদর্শের পাঠকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য কেবল একটি পত্রিকার ওপর নির্ভর করা যথেষ্ট নয়। তাই তিনি স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বাংলা অনলাইন পত্রিকায় লেখালেখি করেন। এই বৈচিত্র্যময় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তিনি সাংবাদিকতায় এক ব্যতিক্রমী "সেঞ্চুরি" অর্জন করেছেন, যা তার পেশার প্রতি গভীর অঙ্গীকারের প্রমাণ।
মমিনুল ইসলাম মোল্লার লেখালেখির প্রধান বিষয়গুলো হলো শিক্ষা, সাহিত্য, সমাজ, নারী, অর্থনীতি, স্থানীয় সরকার, ধর্ম ও পর্যটন। তার সংগ্রহে প্রায় ১০০০-এর বেশি লেখা রয়েছে। এর মধ্যে "এই শীতেই ঘুরে দেখুন সীতাকোট বিহার" শীর্ষক একটি লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর একটি অনলাইন পত্রিকার পাঠক সংখ্যা ২৩ হাজারে পৌঁছেছিল, যা তার লেখার জনপ্রিয়তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তার মতে, একটি গঠনমূলক সমালোচনা অহেতুক প্রশংসার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান এবং এটি লেখকদের মান উন্নয়নে সহায়ক।
পেশা ও ব্যক্তিগত জীবনের মেলবন্ধন
শিক্ষকতার পাশাপাশি সাংবাদিকতায় সময় দেওয়া তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে তিনি অবসর ও ঘুমের সময় কমিয়ে তার এই দুটি পেশাকে দক্ষতার সাথে সামলে নিয়েছেন। তিনি মনে করেন, একজন লেখকের আর্থিক সম্মানী প্রাপ্য এবং এটি কোনোভাবেই তার লেখার বাণিজ্যিকীকরণ নয়। এই প্রসঙ্গে তিনি ইংরেজি কবিদের একটি উক্তি উল্লেখ করেন: "হি হু রাইটস উইদাউট মানি ইজ ব্লকহেড" (He who writes without money is a blockhead)।
মমিনুল ইসলাম মোল্লার জীবন ও লেখায় তার পরিবার, বিশেষ করে তার স্ত্রী ও সন্তানেরা, এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি তার সাহিত্যকর্মকে তাদের বঞ্চনার ফসল মনে করেন না, বরং তাদের সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণার ফসল হিসেবে দেখেন। তার মতে, তার জীবনের সব অর্জন ও খ্যাতির অংশীদার তার স্ত্রী ও সন্তানরা।
শিক্ষক ও লেখক হিসেবে মমিনুল মোল্লার দর্শন
মমিনুল মোল্লা একজন শিক্ষক হিসেবে ছাত্রজীবনে তার নিজের একটি ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হন। ষষ্ঠ শ্রেণীতে ফেল করার পর তার প্রধান শিক্ষকের একটি কথা তাকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। তার শিক্ষক বলেছিলেন, "একই মায়ের পেটের দুই ভাইয়ের মধ্যে একজন বড় অফিসার এবং আরেকজন মাঠে কাজ করে, কারণ তারা ভিন্নভাবে পড়াশোনা করেছে।" এই ঘটনাটি তার জীবন পরিবর্তন করে দেয় এবং এরপর তিনি কোনো পরীক্ষায় আর অকৃতকার্য হননি।
তিনি বিশ্বাস করেন যে, সমাজকে বদলে দিতে প্রত্যেকেরই ভূমিকা রাখা উচিত। তার লেখায় নারীদের প্রতি বঞ্চনা, অবহেলা ও নির্যাতনের কারণ বিশ্লেষণ করে তাদের সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। একই সাথে তিনি নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের উৎসাহিত করেন। তিনি মনে করেন, সমাজের উন্নয়নে তরুণদের সাংবাদিকতা পেশায় আসা উচিত।
মমিনুল ইসলাম মোল্লা তার লেখালেখির অনুপ্রেরণা হিসেবে দৈনিক প্রথম আলোর দেবীদ্বার প্রতিনিধি এবিএম আতিকুর রহমান বাশারকে উল্লেখ করেন। তার কাজের মাধ্যমে তিনি কেবল একজন সাংবাদিক নন, বরং একজন সমাজ সংস্কারক এবং আদর্শবাদী হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছেন।

No comments