দারিদ্র জয়ী নারীঃ কুমিল্লার নেহেরা বেগম
দারিদ্র জয়ী নারীঃ কুমিল্লার নেহেরা বেগম
মমিনুল ইসলাম মোল্লা,সাংবাদিক,কলামিস্ট,কুমিল্লা।।
দারিদ্র জয়ী নারীঃ কুমিল্লার নেহেরা বেগম
মমিনুল ইসলাম মোল্লা
রাতে ঘুমাবার আগে স্বামীকে না জানিয়ে কোয়েলের খামার দেখতে যাওয়া ও কোয়েল পালনের ইচ্ছার কথা বল্লেন। স্বামী বল্লেন- মুরগীর খামার করে লোকসান হয়েছে ২২ হাজার টাকা। কোয়েল চাষেও যদি লোকসান হয় তাহলে যে , পথে নামতে হবে সেটি কি চিন্তা করেছ? নেহেরা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বল্ল-দেখবে কোয়েল পুষেই আমাদের ভাগ্য ফিরবে। স্বামী রহমান পরদিনই চলে গেলেন নারায়নগঞ্জে । ১২০০ কোয়েলের বাচ্চা নিয়ে আসলেন। ৪/৫দিনের মধ্যেই ৪০০ বাচ্চা মারা গেল। ফলে মনটা খারাপ হয়ে গেল। আল্লাহর উপর ভরসা রেখে মুরাদনগরের বাইড়ার ইব্রাহীমের নিকট থেকে ১৮০০ বাচ্চা আনলেন। এবার মারা গেল ৮০০। বেঁচে যাওয়া বাচ্চাগুলোকে পরম যতেœ খাবার খাওয়াতে লাগলেন।বাবার বাড়িতেই থাকেন নেহেরা বেগম। এসএসসি পাশের পর পরই বিয়ে হয়ে গেল। স্বামীর পরামর্শে ভর্তি হলেন কলেজে। কিন্তু সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে লেখাপড়ায় আর বেশী দূরএগিয়ে যেতে পারলেন না। বাড়ির বাইরে গিয়ে চাকরি করাও সম্ভব নয়। তাই ভাবলেন , ঘরে বসে কিছু করা যায় কি না। এর মধ্যে চাচীর পরামর্শে গ্রামীণ ব্যাংকের স্থানীয় সমিতির সদস্য হলেন। ঋণ নিলেন ১৬ হাজার টাকা। স্বামী মৌলবী আঃ রহমানের সহযোগীতায় মুরগীর ফার্ম করলেন। এতে লোকসান হওয়ায় কোয়েল পালন শুরু করলেন। কোয়েলেই ভাগ্য ফেরালেন কুমিল্লার মুরাদনগরের মেটংঘরের মোসাম্মৎ নেহেরা বেগম।
নেহেরা বল্লেন- প্রথম দিকে একটু বেশীই পরিশ্রম করতে হয়। বিশেষ যায়গায় রেখে বাচ্চাগুলোর শরীর গরম রাখতে হয়। ১থেকে ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত এভাবে যতœ নিতে হয়। এসময় রিস্ক বেশী। তিনি জানান,আল্লাহ আল্লাহ করে কোন রকমে ১৫/২০ দিন পার করতে পারলে আর কোন চিন্তা থাকেনা। ৪৫দিন পর কোয়েলের ঘরের দরজা খুলেই দেখলেন তার ভাগ্য খুলে গেছে। একে একে ১০টি ডিম সযতেœ কুঁড়িয়ে এনে কাপড়ের আঁচলে বেধে রাখলেন। স্বামী মাদ্রাসা থেকে ফিরে আসার পর সেগুলো দেখিয়ে চমকে দিলেন। এ ডিম যেন সোনার ডিম। তবে এর রং সাদা কিংবা সোনালী নয়। প্রতিদিন কি পরিমান খরচ হয়? জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন -কোয়েল মুরগীর খাবারই খায় , তবে খরচ মুরগীর তুলনায় অনেক কম। ১০০০ বাচ্চা প্রতিদিন ১৫ কেজি , ডিম পাড়া অবস্থায় ২০ কেজি , এবং অন্য সময় ২৫ কেজি খাবা খায়। (প্রতি কেজি খাবারের দাম ২৮ টাকা) তিনি মাত্র ১৯ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে তার পুঁজি ২ লক্ষ টাকার উপরে। তার নিকট থেকে বাচ্চা নিয়ে মুরাদনগর ছাড়াও নবীনগর , দেবিদ্বার, ও লাকসামে কোয়েলের খামার গড়ে উঠেছে বলে তিনি জানান। তিনি মনে করেন স্বল্প পুঁজি নিয়ে যে কেউ কোয়েল পালন করে অতি সহজে আত্মনির্ভরশীল হতে পারে।
নেহেরার মেয়ে ৬ বছরের ফাতেমা ও ৫ বছরের আয়েশা দৌড়ে গিয়ে কয়েকটি ডিম এনে বল্ল- দেখুন ,ডিমগুলো পাড়ার পর কে যেন এগুলোর উপর নীল ,বেগুন ী,খয়েরেী ও কালো রঙ দিয়ে নক্সা এঁকে দিয়েছে। একেকটা ডিমের ওজন মাত্র ৮ থেকে ১০ গ্রাম । আর শুধু কোয়েলের জন্যই গ্রামীণ শক্তি থেকে দুটি সোলার প্যানেল নিয়েছেন। এতে খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা।তবে এসব নিয়ে ভাবনা নেই তার। কেননা আয় থেকেই দায় শোধ হচ্ছে। বর্তমানে তিনি পাইকারদের কাছে ডিম বিক্রি করেন ২টাকা , ডিম পাড়ার উপযোগী মাদী কোয়েল ৪৫ টাকা , আর পুরুষ কোয়েল বিক্রি করেন প্রতিটি ৩৫ টাকা।
লেখক: মমিনুল ইসলাম মোল্লা,প্রভাষক, ক্যাম্পেনার সিডিএলজি এবং সহকারী সম্পাদক , (দৃষ্টান্ত ডট কম),
No comments