মেয়র ও কাউন্সিলরদের স্বাধীনভাবে কাজ করা প্রসঙ্গে

 

মেয়র ও কাউন্সিলরদের স্বাধীনভাবে কাজ করা প্রসঙ্গে
মমিনুল ইসলাম মোল্লা, সাংবাদিক, কলামস্টি ও সাহিত্যিক,কুমিল্লা ।।

 স্থানীয় সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একে কেন্দ্রীয় সরকারের অঙ্গ ও এজেন্ট হিসেবে রাখা হয়। তাই স্থানীয় সরকারে কোন্ দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল তা রাজনৈতিক পরিমন্ডলে একটি আলোচ্য বিষয় বইকি। 
১২ জানুয়ারী থেকে ১৮ জানুয়ারী পর্যন্ত দেশের ৭টি বিভাগে পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী-এসময় ঘোষিত ২৪২টি পৌরসভার মধ্যে বিএনপির মেয়র  ৯৭ জন, আওয়ামী লীগের ৮৮ জন, দ’ুদলের বিদ্রোহী ২৯ জন এবং ফলাফল স্থগিত আছে ৭টি তে। বিদ্রোহীদের দলীয় র্প্রার্থী  হিসেবে বিবেচনায় চারদলীয় জোট ১১০ টি এবং মহাজোট ১০৮ টি আসন পায় বলে খবরে প্রকাশ।  পৌর নির্বাচনটি ছিল একটি স্বতস্ফুর্ত নির্বাচন। এখানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়েতই ইসলাম, নাগরিক জোট, এলডিপিসহ প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো অংশগ্রহণ করে এবং সবাই কম-বেশি আসন পায়।  পৌরসভা নির্বাচনটিকে কেউ কেউ বাংলাদেশের জন্য মধ্যবর্তী নির্বাচন হিসেবে মনে করছেন। এটি আক্ষরিক অর্থে তা না হলেও সরকারের মেয়াদ দু বছর পার হয়ে যাওয়ার পর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় একে অনেকে মধ্যবর্তী নির্বাচন হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। আর এ নির্বাচনে জয় পরাজয় নিয়ে সরকারের জনপ্রিয়তা কষ্ঠিপাথরে যাচাই করছেন।বিএনপি বলছে এ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো এ সরকারকে জনগণ চায়না। নির্বাচনের পূর্বে তারা জনগণের কাছে বলেছেন, দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাচ্ছে, আইন শৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে, দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে, এসব পরিস্থিতি রোধ করতে আমাদেও প্রার্থেিক ভোট দিন। অন্যদিকে মহাজোটের প্রার্থীরা দিনবদলের স্বপ্ন দেখিয়ে পৌরসভা নির্বাচনে তাদেরকে পাস করানোর আহবান ভোটারদের প্রতি রাখেন।
বর্তমানে র্বালাদেশে ৬টি নগর কর্পোরেশন ও ৩০৯টি পৌরসভা মিলে মোট ৩১৫টি নগরে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি লোক বসবাস করছেন। তাই বিএনপি পৌরসভা নির্বাচনকে বিশেষ গুরূত্ব দিয়েছে বলে বুঝা যায়। দেশে পৌরসভার চেয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা অনেক বেশি হলেও পৌরসভাকে রাজনৈতিকভাবে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। কেননা আমাদের দেশের রাজনীতি নগরকেন্দ্রিক; মিছিল, মিটিং, আন্দোলন, হরতাল সবকিছুই নগরকে কেন্দ্র করে হয়। বিএনপি তো পৌরসভায় নির্বাচিত দলীয় কাউন্সিলর ও মেয়রদের ভবিষ্যতে সরকারের বিরুদ্ধে শুধুই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করবে এটাঁই স্বাভাবিক। কিন্তু দুংখজনক হলেও সত্যি যে নগরীয় স্থানীয় সরকারের এই পৌরসভাগুলিকে স্বশাসিত ও স্বাবলম্বী করার কোনও রূপরেখা বর্তমানে বিএনপি’র নেই, অতীতে তো ছিলইনা, ভবিষ্যতে থাকবে কিনা ভবিতব্য জানে। 
রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দলের ক”জন মেয়র আর ক”জন কাউন্সিলর পাস করেছে ওটাঁই হিসেব করছে। কিন্তু কাউন্সিলর ও মেয়রগণ সঠিকভাবে, স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন কিনা এনিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছেন না। আমরা জানি এ সরকারের আমলেই স্থানীয় সরকারের আরেকটি স্তর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুই বছর অতিবাহিত হলেও উপজেলা চেয়ারম্যানরা কোনও কাজ পাননি। ১০ টি মন্ত্রণালয়ের ১৩টি দপ্তরের কাজ তাদেরকে দেয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত হননি। এ নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানদের মধ্যে বেশ অসন্তোষ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে পরিপত্র জারি করে তাদেরকে নাকি ক্ষমতাহীন করে রাখা হয়েছে। তাদেরকে যদি ক্ষমতা না-ই দেয়া হয় তাহলে উপজেলা পরিষদের পেছনে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করার কি যুক্তি রয়েছে? উপজেলা চেয়ারম্যানরাও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির প্রতি মনযোগী বলেই মনে হয়। সম্প্রতি এক অনশন ধর্মঘটে তারা প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকার পরিবর্তে ২০ হাজার টাকার বেশী বেতন দাবী করেছেন। নিজস্ব আয়ে একটি বাইসাইকেল বা রিকশা কেনার সামর্থ্য না থাকলেও ইতোমধ্যে তাঁরা ৪৩ লক্ষ টাকার গাড়ী পেয়েছেন, যেটি জনমনে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে বইকি।
বিএনপির নেতাগণ অভিযোগ করেছেন তাদের এমপিদের ক্ষমতা না দিয়ে “ঠুঁটো জগন্নাথ” করে রাখা হয়েছে। তাদের এ অভিযোগ সর্বাংশে তো মিথ্যা নয়। কোন কোন আসনে সরকার দলীয় মহিলা এমপিদের মাধ্যমে উন্নয়ন কাজ চালানো হলেও সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। তাই পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির অধিকাংশ প্রার্থী পাশ করলেও জনগণ খুশি হতে পারছেন না। তাদের আশংকা ছলে-বলে-কৌশলে বিএনপি দলীয় তথা বিরোধী দলীয় মেয়র ও কাউন্সিলরদের ক্ষমতা হ্রাস করা হতে পারে; অথবা স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া হবেনা। অন্ততঃ অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে একথা অনেকে বলছেন। তবে এটি কেন্দ্রীয় সরকারের ভবিষ্যৎ কর্মকান্ডে প্রমাণিত হবার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯ অনুযায়ী পৌরসভার দায়িত্ব ও কার্যাবলী হচ্ছে, নাগরিক সুবিধা প্রদান, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ইমারত নিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষা, পানি সরবরাহ, পানি ও পয়নিষ্কাশন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রাস্তা, ফুটপাত, টার্মিনাল নির্মাণ, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, যাত্রী ছাউনি, সড়ক বাতি, যানবাহন, পার্কিং, পরিবেশ সংরক্ষণ, বৃক্ষরোপণ, রক্ষনাবেক্ষণ, বাজার ও কসাইখানা স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা, খেলাধুলা, চিত্ত বিনোদন,  প্র্রাথমিক শিক্ষা, রোগ প্রতিরোধ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, অগ্নি প্রতিরোধ ও দারিদ্র দূরিকরণ। পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলরগণ যদি স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারতেন এবং আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতেন তাহলে উপরিউক্ত কার্যাবলী সঠিকভাবে সম্পাদন করতে পারতেন। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী এমন পৌরসভার সংখ্যা খুবই কম। কর, উপকর, রেইট, টোল, ফিস, খাজনা ও ইজারা থেকে কিছু আয় আসলেও সেগুলো দিয়ে পৌরসভার উন্নয়ন তো দূরের কথা পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আংশিক বেতন ভাতাও সঠিকভাবে দেয়া যায়না। ফলে নগরীয় স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠান পৌরসভাকে কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট হাত পাততেই হয়। এই ধরনের পরিস্থিতিতে রাজনৈতিকভাবে স্বশাসিত ও আর্থিকভাবে স্বাবলমী হবার প্রবল আকাংখা তো নগরীয় প্রতিনিধিদের মধ্যে তেমন একটা পরিলক্ষিত হয়ে আসছে না। আবার কেন্দ্রীয় সরকারও এদেরকে নির্ভরশীল ও এজেন্ট হিসেবে রাখতে খুবই তৎপর বলে প্রতীয়মান। তাই এই অসহনীয় অবস্থা থেকে নগরীয় স্থানীয় সরকারকে অবশ্যই মুক্ত করতে হবে। 
 মেয়ররা এতদিন পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অন্যদিকে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ ইতিপূর্বে কমিশনার নামে পরিচিত ছিলেন। বর্তমানে তারা কাউন্সিলর নামে পরিচিতি পাচ্ছেন। হঠাৎ করে পদবী পরিবর্তনের কারণ কি? এতে কি তাদের ক্ষমতা ও মর্যাদা বৃদ্ধি পাচ্ছে? গুণগত ও পদ্ধতিগত পরিবর্তন না করে মানুষকে শুধু খুশী করার এই অপকৌশল বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। নগরীয় স্থানীয় সরকার হিসেবে পৌরসভাকে কার্যকর করতে হলে শূধুমাত্র আলঙ্করিক পরিবর্তন করলে হবেনা। সুচিন্তিভাবে খোলনলচে পাল্টে ফেলতে হবে। এই জন্য স্থানীয় সরকার গবেষক ও সিডিএলজি’র নির্বাহী পরিচালক আবু তালেব প্রণীত গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের রূপরেখায় উপস্থাপিত নগর সরকারের রূপরেখা ও ২১ দফা সুপারিশ অবিলম্বে পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায় জনপ্রতিনিধি হিসেবে মেয়র ও কাউন্সিলররা পূর্ণাঙ্গভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। এই রূপরেখার কিছু কিছু বিষয় খন্ডিত ও বিছিন্নভাবে গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করলে প্রকৃত সুফল থেকে জাতিকে বঞ্চিত করা হবে। তার উদাহরণ হচ্ছে মেয়র ও কাউন্সিলর পদবী চালু করা। তিনি তাঁর প্রস্তাবিত রূপরেখায় নগর সংসদ (কাউন্সিল) গঠন করে নগর সাংসদ (কাউন্সিলর) পদবী নামকরণ করার কথা বলেছেন। এবং দেশের ৩১৫টি নগরে এক ধরনের নগর সরকার চালু করে ছোট-বড় সকল নগরে মেয়র পদবী চালুর প্রস্তাব করেছেন। তাঁর প্রস্তাবের আসল মর্ম না বুঝে, না গ্রহণ করে শুধু পদবীর বিষয়টি বাস্তবায়ন করার আসল উদ্দেশ্য রহস্যজনক। এই প্রসঙ্গে আমাদের অনুরোধ নগর সরকারের রূপরেখা ও ২১ দফা সুপারিশ ভালভাবে উপলদ্ধিতে নিন এবং তা অবিলম্বে কার্যকরের উদ্যোগ গ্রহণ করুন।  
সূত্র মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে ২টি বিশেষ শ্রেণীর পৌরসভা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে নারায়নগঞ্জ ও টঙ্গী। এছাড়া ১ম শ্রেণীর পৌরসভা রয়েছে ৮৮টি, ২য় শ্রেণীর পৌরসভা ৮০টি এবং ৩য় শ্রেণীর পৌরসভা রয়েছে ১৩৯টি।  স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বিশেষ ও ১ম শ্রেণীর পৌরসভার মেয়রের সম্মানীভাতা ২০,০০০ টাকা ও কাউন্সিলরের সম্মানীভাতা ৫,০০০ টাকা, ২য় শ্রেণীর মেয়রের সম্মানীভাতা ১৫,০০০ টাকা ও কাউন্সিলরের সম্মানীভাতা ৪,০০০ টাকা আর ৩য় শ্রেণীর মেয়রের সম্মানীভাতা ১২,০০০ টাকা ও কাউন্সিলরের সম্মানীভাতা ৪,০০০ টাকা। কিন্তু মেয়রদের অধিকাংশ সময় পৌরসভার অফিসে পাওয়া যায়না বলে অভিযোগ রয়েছে। মেয়রদের চাকুরি পূর্ণকালীন না হওয়ায় তারা পাশাপাশি ব্যাবসায়িক বা অন্য কাজে নিয়োজিত থাকছেন। এদের কেউ কেউ ঢাকায় বসবাস করেই দাপ্তরিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে জনসাধারণ তাদের ন্যায্য আধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই স্থানীয় সরকার গবেষক জনাব আবু তালেব প্রণীত নগর সরকারের রূপরেখা ও ২১ দফা সুপারিশের ৫ম দফা অনুযায়ী মেয়রদের চাকুরি পূর্ণকালীন এবং ৮ম দফা অনুযায়ী কাউন্সিলরদেরকে খন্ডকালীন করা উচিত। বর্তমানে কিছু কিছু পৌরসভায়  উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ পৌর প্রশাসক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন রয়েছেন। এটিও বিধিসম্মত নয়। কোন নগরীয় এলাকাকে পৌরসভা ঘোষণার পর পৌরসভার কার্যাবলী সম্পাদনের জন্য সরকার একজন প্রশাসক নিয়োগ করতে পারে। তবে পৌর প্রশাসক কোনক্রমেই একাধিকবার অথবা ১৮০ দিনের অধিক দায়িত্বে থাকার বিধান নেই। এই নিয়ম কি আদৌ মানা হয়?
১৭৯৩ সালে কোলকাতা, মাদ্রাজ ও বোম্বাই পৌরসভা গঠিত হয়। ১৮৬৪ সালে পৌরসভা অধ্যাদেশ জারি হয়। সেই হিসেবে বাংলাদেশের পৌরসভাগুলো প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো। তারপরও সুনির্দিষ্ট তত্ত্বের ও পদক্ষেপের অভাবে এগুলো পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। পৌরসভাকে সঠিকভাবে নগরবাসীর কল্যাণকামী প্রতিষ্ঠানরূপে গড়ে তোলার জন্য ”সেন্টার ফর ডেমোক্রেটিক লোকাল গভার্নেন্স (সিডিএলজি)” নগর সরকারের রূপরেখা ও ২১ দফা সুপারিশ নিয়ে লাগাতার ক্যাম্পেইন করে আসছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: নিজস্ব বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের অধিকার, কর আরোপ ও আদায় উৎসাহিত এবং আর্থিক স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করতে প্রত্যেক পৌরসভা ও পৌরকর্পেরেশনে ১০০% সিস্টেম কস্ট (যেমন-মেয়র ও কাউন্সিররদের ভাতা,কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, যানবাহন ক্রয়, মেরামত, সংরক্ষণ, জ্বলানী, টেলিফোন বিল, বিদ্যুৎ বিল, ইন্টারনেট বিল, প্রতিদিনের আবশ্যকীয় খরচ ইত্যাদি) ও বেশীরভাগ সেবা ও উন্নয়নমূলক কস্ট অবশ্যই নিজস্ব আয়/তহবিল থেকে ব্যয় করার বিধান সংযোজন করতে হবে। পৌরসভা ও পৌর কর্পেরেশনে নিজস্ব ম্যাকানিজম স্থাপন করে তার মাধ্যমে জবাবদিহিতা ও পদ্ধতিগত স্বচ্ছতা ইত্যাদি সুনিশ্চিত করতে হবে।
তাই পৌরসভাকে যদি সত্যিকার অর্থে স্বশাসিত, স্বাবলম্বী নগরীয় স্থানীয় সরকার হিসেবে পরিণত করতে হয় তাতে নগর সরকারের রূপরেখা অনুযায়ী নগর সরকার গঠন করতে হবে।  এই নগর সরকারের নগর প্রশাসন ১ জন মেয়র ও ২ জন ডেপুটি মেয়র ( ২১ দফা সুপারিশের ৬ষ্ঠ দফা অনুযায়ী একজন পুরুষ ডেপুটি মেয়র ও একজন মহিলা ডেপুটি মেয়র) নিয়ে গঠিত হবে। নগর সংসদে কাউন্সিলরগণ বিধায়কের দায়িত্ব পালন করবেন এবং নগর সংসদ ২১ দফা সুপারিশের ৮ম দফা অনুযায়ী গঠন করতে হবে । নগর আদালতের জন্য আলাদা জনবলের প্রয়োজন হবে। তারা সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকদের মাধ্যমে নির্বাচিত অথবা মনোনীতও হতে পারেন।  তবে মেয়র, ডেপুটি মেয়র ও কাউন্সিলর কোনও বিচারিক ক্াজ করতে পারবেন না। পরিশেষে বলা যায়, এদেশের মালিক জনগণ। জনগণের পক্ষে জনপ্রতিনিধিগণ শাসনকার্য পরিচালনা করেন। কেউ যদি মনে করেন নগরীয় স্থানীয় সরকার কেন্দ্রীয় সরকারেরই এজেন্ট এবং সবসময় কেন্দ্রীয় সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে থাকবে, তবে সেটি ভুল ধারণা। নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরগণ কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত হননি। জনগণের মাধ্যমে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়েছেন।  তাই কেন্দ্রীয় সরকারের আজ্ঞাবাহক বা এজেন্ট হিসেবে নয়, স্থানীয় নগরবাসীর প্রয়োজন অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালিত হতে হবে এটাঁই সকলের প্রত্যাশা। এর জন্য আইনী বাধা দূর ও কাঠামোগত পরিবর্তন করতে নগর সরকারের রূপরেখা ও ২১ দফা সুপারিশ এখনই গ্রহণ ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে।
লেখক: প্রভাষক, সাংবাদিক ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের জন্য ক্যাম্পেনার, এলাহাবাদ ইউনিয়ন, চট্রগ্রাম বিভাগ,   ইমেইল: সধসরহসড়ষষধয@ুধযড়ড়.পড়স     

No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.