রক্তাক্ত 71==মুরাদনগরের বীর মুক্তিযোদ্ধারা
রক্তাক্ত 71==মুরাদনগরের বীর মুক্তিযোদ্ধারা
মহান মুক্তিযুদ্ধে কুমিল্লার মুরাদনগরের কৃতি সন্তানদের অবদান ছিল অসামান্য। এখানে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি বীর বিক্রম ও বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারাও রয়েছেন। এ নিবন্ধে কয়েকজন বীর সেনা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—
আব্দুল মালেক, বীর বিক্রম
আব্দুল মালেকের বাড়ি মুরাদনগরের কড়ইবাড়ি গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মো. ইছহাক। ১৯৭১ সালে তিনি ইপিআর-এর নিয়মিত সেনা হিসেবে রাজশাহী এলাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ উইং-এ কর্মরত ছিলেন। পাকিস্তানি সেনারা গোদাগাড়িতে প্রবেশ করলে মালেক ও তাঁর বাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ৬ এপ্রিল কোর্ট স্টেশনের কাছে তুমুল যুদ্ধে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন এবং সেখানেই দাফন করা হয়।
আবদুল মান্নান, বীর বিক্রম
শহীদ আবদুল মান্নানের জন্ম মুরাদনগরের সিদ্ধেশ্বরী গ্রামে। পিতা আলতাফ আলী ও মাতা জোলেখা বেগম। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে অংশ নেন। চৌদ্দগ্রামের হাজতখোলা গ্রামে যুদ্ধ করতে গিয়ে শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধারা জয়ী হলেও বীর মান্নান দেশকে মুক্তির বিনিময়ে জীবন উৎসর্গ করেন।
আবু মুসলিম, বীর প্রতীক
আবু মুসলিমের জন্ম মুরাদনগরের জারেরা গ্রামে। পিতা তালেব আলী সরদার ও মাতা পেশকারের নেছা। শিক্ষার্থী অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের আগস্টে সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানায় আক্রমণে অংশ নেন। তুমুল যুদ্ধে পাকবাহিনী পরাজিত হয়ে পালিয়ে যায় এবং ৩ জন আটক হয়।
মোহাম্মদ আবু তাহের, বীর প্রতীক
আবু তাহেরের জন্ম মুরাদনগরের পীর কাশিমপুর গ্রামে। পিতা আশরাফ আলী ভূঁইয়া, মাতা জোবেদা খাতুন। তিনি ইপিআরের সদস্য ছিলেন এবং দিনাজপুর সেক্টরে কর্মরত ছিলেন। ছাতকের যুদ্ধে তিনি অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন। পাকিস্তানি বাহিনীর বিমান হামলার মাঝেও লড়ে যান বীরের মতো। তিনি ১৯৭৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
মনসুর আলী, বীর প্রতীক
মনসুর আলীর পৈতৃক বাড়ি মুরাদনগরের গুঞ্জুর গ্রামে। পিতা কেরামত আলী ফকির, মাতা সূর্যবান বেগম, স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। তিনি ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। কুড়িগ্রামের কোদালকাটির যুদ্ধে তাঁর নেতৃত্ব ও বীরত্ব স্মরণীয় হয়ে আছে। তিনি ২০০৫ সালে ইন্তেকাল করেন।
মুরাদনগরের এই বীর সন্তানদের মতো দেশের প্রতিটি মুক্তিকামী যোদ্ধাই আমাদের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছেন। তাঁদের প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধা।
✍️ লেখক: মমিনুল ইসলাম মোল্লা
সাংবাদিক, কলামিস্ট ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, কুমিল্লা।
No comments