কোন শ্রেণীর মিসকীনকে সিয়ামের ফিদিয়া প্রদান করা যাবে? কতটুকু পরিমাণ এবং কোন প্রকারের খাদ্য?

 মমিনুল ইসলাম মোল্লা, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ধর্মীয় লেখক, কুমিল্লা।। 

যে ব্যক্তি রমজানে সিয়াম পালনে সক্ষম এবংযার কোন শরিয়ত অনুমোদিতওজর নেই তার জন্য রোযা না-রাখাজায়েয নয়। যে ব্যক্তি শরিয়তের শিথিলতার সুযোগ নিয়ে রোযা না-রাখবেন তাদের সকলকে যে প্রতিদিনের রোযার পরিবর্তে মিসকীন খাওয়াতে হয়এমনটি নয়।বরং মিসকীনখাওয়াতে হয়অশীতিপর বৃদ্ধকেএবংএমন রোগীকেযার সুস্থতার আশা নেই।

আল্লাহতা‘আলা বলেন: “আর যাদের জন্য তা (সিয়াম পালন) কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদিয়া তথা একজন দরিদ্রকে খাবার প্রদান করা।”[সূরা বাক্বারাহ, ২ :১৮৪]

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন : “এরা হল অশীতিপর বৃদ্ধ নর ও নারী। যারা রোযা পালন করতে সক্ষম নয়। তারা প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাওয়াবে।”[ এটি বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারী (৪৫০৫)]

একইভাবে যে রোগীর সুস্থতার আশা নেই তার হুকুমও অশীতিপর বৃদ্ধের ন্যায়।ইবনে ক্বুদামাহ(রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন : “যে রোগীর সুস্থতার আশা নেই সে রোযা না-রেখে প্রতিদিনের রোযার পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাওয়াবে। কারণ এমন রোগীও অশীতিপর বৃদ্ধেরহুকুমে পড়ে।” সমাপ্ত[আল মূগনী, পৃষ্ঠা- ৪/৩৯৬]

দুই:

এই মিসকীনের বালেগ হওয়া শর্ত নয়।

বরং সকল ইমামের ইত্তিফাক্ব (ঐক্যমত্য) অনুসারে যে ছোট শিশু খাবার খেতে পারে তাকেও ফিদিয়া দেয়া যাবে। শুধু দুগ্ধপোষ্য শিশুকে ফিদিয়া দেয়ার ব্যাপারে আলেমগণ মতানৈক্য করেছেন। অধিকাংশ আলেমগণ (ইমাম আবু হানীফা,ইমাম আশ-শাফেয়ী ও ইমাম আহমাদ)সেটাও জায়েয বলেছেন। কারণ দুগ্ধপোষ্য শিশু মিসকীন বিধায় সাধারণভাবে সেও আয়াতের অন্তর্ভুক্ত হবে। ইমাম মালেক (রাহিমাহুল্লাহ) এর কথা থেকে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় যে দুগ্ধপোষ্য শিশুকে ফিদিয়া দেয়া যাবে না। যেহেতু তিনি বলেছেন: “দুধ ছাড়ানো হয়েছে এমন শিশুকে ফিদিয়া দেয়া যাবে।” তাঁর এ মতটি গ্রহণ করেছেন ইবনে ক্বুদামা রাহিমাহুল্লাহ। [দেখুন আলমূগনী (১৩/৫০৮), আলইনস্বাফ(২৩/৩৪২) ও আলমাওসূআআলফিক্বহিয়্যাহ(৩৫/১০১-১০৩)]

তিন:

মিসকীনের সন্তানসন্ততি, স্ত্রী ও পরিবারবর্গ যাদের ভরণপোষণ দেয়া তার উপর ওয়াজিব তারাও এই সংখ্যার অন্তর্ভুক্ত হবে- যদি তারা তাদের যতটুকু প্রয়োজনসেটা না পায় এবং এই মিসকীন ব্যতীত তাদের জন্য খরচ করার আর কেউ না থাকে।তাই তো কোন মিসকীনকে যাকাতের সম্পদ থেকে ততটুকু দেয়া হয় যা তার নিজের জন্য ও তারপরিবারের জন্য যথেষ্ট হয়।

আর রাউদুল মুরবি(৩/৩১১) গ্রন্থে রয়েছে :“দুই শ্রেণী (অর্থাৎ ফকীর ও মিসকীন) কেততটুকু পরিমাণ যাকাতদিতেহবে যতটুকু তাদের নিজের জন্য ও তাদের পরিবারেরজন্য পূর্ণভাবে যথেষ্ট হয়।”সমাপ্ত

চার:

প্রদানযোগ্য খাদ্যের প্রকার ও পরিমাণ:

একজন মিসকীনকে স্থানীয় খাদ্যদ্রব্য হতে অর্ধ সা‘ (প্রায় ১.৫ কেজি) প্রদান করতে হবে। তা চাল, খেজুর বা অন্য যা কিছু হোক না কেন। আর যদি এর সাথে কোন তরকারী বা গোশত দেয়া হয় তবে সেটা আরো উত্তম।

ইমাম বুখারী নিশ্চয়তাপ্রকাশক শব্দ ব্যবহার করে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বার্ধক্যে পৌঁছানোর পর যখন রোযা পালনে অক্ষম হয়ে পড়লেন তখন রোযা না-রেখে প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে রুটি ও গোশত খাওয়াতেন।

খাদ্যেরপরিবর্তে সমমূল্যের অর্থ দ্বারা ফিদিয়া প্রদান করা জায়েয নয়। শাইখ সালেহ ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন: যেমনটি আমি পূর্বেই উল্লেখ করেছি অর্থকড়ি প্রদানের মাধ্যমে ইত্বআম (মিসকীন খাওয়ানো)এর বিধান আদায় হবে না। মিসকীনকে খাদ্য খাওয়ানো/প্রদান করা হবে স্থানীয় খাদ্যদ্রব্য দিয়ে। প্রতিদিনের রোযার পরিবর্তে স্থানীয় এলাকায় প্রচলিত খাদ্যদ্রব্যের অর্ধ সা‘ প্রদান করতে হবে। অর্ধেক সা‘ এর পরিমাণ প্রায় ১.৫ কেজি।

তাই যে পরিমাণেরকথা আমরা উল্লেখ করেছি সেই পরিমাণস্থানীয় খাদ্যদ্রব্যদিয়ে আপনাকে কাফ্‌ফারা দিতে হবে; অর্থ দিয়ে নয়। যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন :

(وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ)

“আর যাদের জন্য তা (সিয়াম পালন) কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদিয়া তথা একজন দরিদ্রকে খাবার প্রদান করা।”[সূরা বাক্বারাহ, ২ :১৮৪] এ আয়াতে পরিষ্কারভাবে খাদ্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।”সমাপ্ত।
[আলমুনতাক্বা মিন ফাতাওয়াস্‌ শাইখ সালেহ আলফাওযান (৩/১৪০)]

No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.