নাসিরুদ্দিন নাসির উদ্দিন আলবানীর শিক্ষাজীবন

নাসিরুদ্দিন নাসির উদ্দিন আলবানীর শিক্ষাজীবন
তার  পরিবারছিল দরিদ্র। কিন্তু দীনদারী ও জ্ঞানার্জন তাদের দারিদ্রতার উপর ছিল বিজয়ী। তার পিতা ছিলেন আলবেনিয়ার একজন বিজ্ঞ আলেম। ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের জন্য মানুষ তার কাছে ছুটে যেত। তিনি সাধ্যানুযায়ী মানুষকে দ্বীনের জ্ঞান দিতেন এবং তাদেরকে দিক নির্দেশনা প্রদান করতেন। তিনি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে শরীয়াহ বিষয়ে শিক্ষকতা করেন।
আলবেনিয়ায় প্রেসিডেন্ট আহমদ জাগু পশ্চাত্যক্ষা জীবন:
দামেস্ক আসার পর আলবানীর বয়স নয় বছরের কাছাকাছি হলে তার পিতা তাকে সেখানকার ‘স্কুল অব এইড চ্যারিটি’ নামক একটি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। সেখানেই তিনি কৃতিত্বের সাথে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন।
প্রচলিত একাডেমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় দীন সম্পর্কে ভাল জ্ঞানার্জনের ব্যবস্থা ছিল না। বিধায় তার পিতা এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজ ছেলের পড়া-শোনার ক্ষেত্রে ভিন্ন দৃষ্টি পোষণ করতেন। এ কারণে, তিনি নিজে সন্তানের জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষা সিলেবাস তৈরি করে তার মাধ্যমে তাকে আল কুরআনুল কারীম, তাজবীদ, নাহু, সরফ এবং হানাফী ফিকাহ ইত্যাদি বিষয় শিক্ষা দিতে লাগলেন। ফিকাহের মধ্যে হানাফী ফিকাহের অন্যতম কিতাব মুখতাসরুল কুদুরী পড়ান। তিনি তার পিতার কাছেই হাফস বিন আসেম এর রেয়াওয়াত অনুযায়ী কুরআনের হিফয সমাপ্ত করেন।
এরপর তার পিতার বন্ধু বিশিষ্ট আলেম শাইখ সাঈদ আল বুরহানীর নিকট হানাফী ফিকাহের কিতাব মুরাকিল ফালাহ, নাহুর কিতাব শুযূরুয যাহাব এবং আধুনিক যুগের লিখা আরবী সাহিত্য ও ইলমুল বালাগাহর কিছু কিতাবাদি পড়েন। এর পাশাপাশি তিনি তখনকার দামেস্কের প্রসিদ্ধ আলেম আল্লামা মুহাম্মদ বাহজা আল বাইতারের বিভিন্ন দারসে অংশ গ্রহণ করতেন।
তিনি তার পিতার কাছেই ঘড়ি মেরামতের কাজ শিখেন এবং এ ক্ষেত্রে সুখ্যাতি অর্জন করেন। এরপর তিনি ঘড়ি মেরামতকেই জীবীকার পেশা হিসেবে বেছে নেন। এই পেশায় তিনি ব্যক্তিগত পড়া-লেখা ও বিভিন্ন কিতাবাদী অধ্যয়নের পর্যাপ্ত সময় পান। এভাবে সিরিয়ায় হিজরতের মাধ্যমে তার জন্যে আরবী ভাষা ও মূল উৎস থেকে শরীয়তের জ্ঞানার্জনের পথ সুগম হয়।
হাদীস অধ্যয়ন:
হাদীস অধ্যয়নের প্রতি তার মনোনিবেশ:
যদিও তার পিতার ঐকান্তিক ইচ্ছা ছিল তার ছেলে যেন হানাফী মাজহাবের তাকলীদ করে। যার কারণে তিনি তাঁকে ইলমে হাদীস চর্চায় মনোনিবেশ করতে সতর্ক করতেন। তথাপি আলবানী ইলমুল হাদীস ও হাদীস চর্চার দিকে ঝুঁকে পড়েন। এ ক্ষেত্রে তাঁকে প্রেরণা যোগায় শাইখ মুহাম্মদ রশীদ রেজা কর্তৃক প্রকাশিত আল মানার নামক একটি মাসিক ম্যাগাজিন। সেখানে হাদীস বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন সন্দর্ভ প্রকাশিত হয় এবং তিনি সেগুলো নিয়মিতভাবে অধ্যয়ন করতে থাকেন। এভাবে ধীরে ধীরে হাদীস চর্চায় মনোনিবেশ করার জন্য তার মন ব্যাকুল হয়ে উঠে। তারপর ব্যাপক আগ্রহ সহকারে হাদীস চর্চা শুরু করেন। ফলে মাত্র বিশ বছর বয়সে তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে যথেষ্ট বুৎপত্তি অর্জন করেন।
এবার তিনি হাদীসের সেবায় কলম ধরলেন। সর্ব প্রথম যে কাজটি করলেন তা হল, তিনি হাফেজ ইরাকী (রহ:) এর লিখা “المغني عن حمل الأسفار في تخريج ما في الإحياء من الأخبار”  নামক কিতাবটি কপি করে তাতে টিকা সংযোজন করলেন।
শাইখের এই কাজটি তার সামনে হাদীস নিয়ে গবেষণার বিশাল দরজা খুলে দেয়। এরপর ইলমে হাদীস নিয়ে গবেষণা করা তার প্রধান কাজে পরিণত নয়। ক্রমেই তিনি দামেস্কের ইলমী জগতে এ বিষয়ে পরিচিতি লাভ করেন।
যার পরিপ্রেক্ষিতে দামেস্কের জাহেরিয়া লাইব্রেরী কর্তৃপক্ষ তার জন্য বিশেষ একটি কক্ষ নির্ধারণ করে দেয়, যেন তিনি সেখানে অবস্থান করে গবেষণা কর্ম চালাতে পারেন। সেই সাথে লাইব্রেরীর একটি চাবিও তাকে দেয়া হয় যেন তিনি যখন খুশি তাতে প্রবেশ করতে পারেন।
তবে বই-পুস্তক লেখা শুরু করেন তার জীবনে দ্বিতীয় স্তরে। এই পর্যায়ে এসে তিনি সর্ব প্রথম যে গ্রন্থটি রচনা করে তা হল:  تحذير الساجد من اتخاذ القبور مساجد এটি একটি দলীল নির্ভর তুলনামূলক আলোচনা ভিত্তিক ফিকাহের কিতাব। এটি একাধিক বার মুদ্রিত হয়েছে।
ইলমে হাদীসের রীতি অনুসারে হাদীসের তাখরীজ সংক্রান্ত প্রথম পর্যায়ের অন্যতম একটি গ্রন্থ হল:
الروض النضير في ترتيب و تخريج معجم الطبراني الصغير”
যা এখানো পাণ্ডুলিপি আকারেই রয়েছে।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসের সাথে যুক্ত থাকার কারণে শাইখ আলবানীর মধ্যে সালাফী চিন্তা-চেতনার বিকাশ ঘটে। সেই সাথে সালাফী ধারার বিশ্ব বরেণ্য আলেম শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া এবং তার ছাত্র ইবনুল কাইয়েম (রহ.) রচিত গ্রন্থাদী অধ্যয়ন করার ফলে এই রীতির উপর তার দৃঢ়তা আরও মজবুত হয়।
শাইখ আলবানী এবার সিরিয়ায় তাওহীদ ও সুন্নাহর দিকে দাওয়াতের পতাকা তুলে ধরলেন। ফলে সিরিয়ার অনেক আলেম ওলামা তার সাক্ষাতে আসেন এবং শাইখ ও ঐ সকল আলেমদের মাঝে তাওহীদের বিভিন্ন মাসআলা, কুরআন-সন্নাহর অনুসরণ, মাজহাবী গোঁড়ামি, বিদআত ইত্যাদি অনেক বিষয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা ও তর্ক-বিতর্ক হয়।
ফলে মাজহাবের অন্ধভক্ত গোঁড়া আলেম-ওলামা, সুফি, বিদআতী এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন একশ্রেণীর নামধারী আলেমদের পক্ষ থেকে তিনি প্রচণ্ড বিরোধিতার সম্মুখীন হন। এ সকল ব্যক্তিরা সাধারণ অজ্ঞ-মূর্খ লোকদেরকে তার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে তোলে। তাকে ‘পথভ্রষ্ট ওহাবী’ বলে অপপ্রচার চালাতে থাকে এবং জনসাধারণকে শাইখ থেকে সর্তক করতে থাকে।
অপরপক্ষে তার দাওয়াতের সাথে ঐকমত্য পোষণ করেন দামেস্কের ইলম ও পরহেজগারীতায় প্রসিদ্ধ স্বনামধন্য আলেম-ওলামাগণ। তারা শাইখকে তার দাওয়াতের পথে দৃঢ় কদমে এগিয়ে যাওয়ার প্রতি উৎসাহিত করেন। সে সকল ওলামাগণের মধ্যে অন্যতম হলেন: বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন আল্লামা বাহজাত আল বাইতার, সিরিয়া মুসলিম যুব সংঘের প্রধান শাইখ আব্দুল ফাত্তাহ আল ইমাম, শাইখ তাওফীক আল বাযারাহ প্রমুখ।

No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.