হাউজে কাউসারঃ বঞ্চিত হবে মুনাফিক, মুরতাদ ও বিদাতি

 হাশরের ময়দানে মুসলমানগণ তাদের নবীগণের সাথে সাক্ষাত করবে। প্রত্যেক নবীর আলাদা-আলাদা হাউজ থাকবে। নবীগণ নিজ হাতে তাদের অনুসারীদের পানি পান করাবেন। সূর্য মাথারউপর থাকায় সেদিন মানুষ পিপাসার্ত হবে। কিন্তু হাইজে কাউসারের পানি একবার পান করলে সে অরর তৃষ্ঞার্ত হবে না। পৃথিবীর প্রথম মানুষ হযরত আদম ( আঃ) । তিনি সেদিন উপস্থিত থাকবেন। তার থেকে শুরু করে পৃথিবীতে জন্ম গ্রহনকারী সর্বশেষ ব্যক্তিটি পর্যন্ত হাশরের ময়দানে উপস্থিত থাকবেন। বহু মানুষ একত্রিত হওয়ায় এবং সূর্য নিকটে থাকায় পিপাসায় সবার কন্ঠ রোধ হয়ে আসবে। ভয়ে এক ফোঁটা পানির জন্য সেদিন সবাই ছটফট করবে। হাউজটি হবে খুবই প্রশস্ত। হাউজের বর্ণনায় যা পাওয়া যায় সেটি এমন এক হাউজ , যা অত্যন্ত প্রশস্ত এবং অতিশয় স্বচ্ছ। তার পানি দুধের চেয়ে সাদা এবং মধুর চেয়েও মিষ্টি। হাউজের পানির ঘ্রাণ মেশকের চেয়ে বেশি মিষ্টি । তার পেয়ালার সংখ্যা আকাশের তারকারাজির সমান। তিরমিযিতে বলা হয়েছে, নবি করিম (সাঃ) বর্ণনা করেন- “ প্রত্যেক নবীর হাউজ থাকবে। কার উম্মত সবচেয়ে বেশি পানি পান করার জন্য আসে এ নিয়ে তারা গর্ব করবেন। আমি আশা করি যে, আমার উম্মত সবচেয়ে বেশি হাউজে অবতরণ করবে ( তিরমিজি- ২৪৪৩)। মুহাম্মদ মোস্তফা আহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) বিশ্ব নবী তার মানে অন্যান্য নবীগণ ছিলেন বিভিন্ন গোত্রীয় নবী । তাই আমাদের নাবীর উম্মত স্বাভাবিকভাবেই বেশি হবে। আমরা আযানের পর পঠিত দোয়ায় সব সময় নবিকে সর্বোচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করার জন্য দোয়া করি। হাশরের ময়দানে তিনিই হবেন বনি আদমের সর্দার। বিভিন্ন সহিহ হাদিসে হাউজ সম্পর্কে বলা হয়েছে। একটি হাদিসে বলা হয়েছে- তোমাদের সামনে একটি হাউজ যা “ জারবা ” থেকে “ আজরুহ ” পর্যন্ত ( বুখারি- ২৬০৬ )। অন্য যায়গায় বলা হয়েছে  আমার হাউজের পরিমান হলো আইলা ও সানা শহরদ্বয়ের দূরত্বের সমান ( বুখারি- ৬২০৯ )। হাউজের প্রশস্ততা সমপর্কে বিভিন্ন হাদিসে বিভিন্ন রকম তথ্য পাওয়া যায়। একটি হাদিসে বলা হয়েছে হাউজের দুদিক সানা ও মদিনার দূরত্বের সমান। অন্য হাদিসে বলা হয়েছে- আমার হাউজ আইলা ও আদনের চেয়েও অনেক দূর ( মুসলিম-২৪৭ )। এছাড়া কোন কোন হাদিসে আদন হতে বালকা , কাবা থেকে বাইতুল মাকদাস, মদীনা থেকে আম্মান অথবা আইলা তেকে জুইফা পর্যন্ত বলা হয়েছে। এর দৈর্ঘ্যওে ব্যাপারে  এক মাসের সমান পথের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে ( মুসলিম- ২২৯২ )। হাশরের ময়দানে মুমিনরা হাউজে যাবে। সেখানে অনেক পেয়ালা থাকবে। সবাই সহজে পানি পান করতে পারবে। এসময় তাদের মধ্যে কোন মতানক্যৈ হবে না। অতিরিক্ত ভীড়ও থাকবে না। নবি করিম (সাঃ) বলেন, হাউজে কাউসারে আকাশের তারকারজির ন্যায় অনেক স্বর্ণের ও রুপার জগ থাকবে। অথবা আকাশের তারকারাজির চেয়েও বেশি জগ থাকবে ( মসনাদে আহমদ-১৩৫২)। 
প্রত্যেক নবি ও রাসুলের আলাদা আলাদা হাউজ থাকবে। আমাদের নবি (সাঃ) কামনা করবেন, যেনো তার উম্মত সবচেয়ে অধিক সংখ্যক হাউজে অবতরণ করে। যত উম্মত হাজির হবে সবাইকে তিনি পানি পান করাতে চাইবেন। হাউজে কাউসারের অবস্থান কোথায় হবে একটি হাদিসে তার ঈঙ্গিত পাওয়া যায়। নবি করিম (সাঃ) বলেছেন, “ আমার ঘর ও মিম্বরের মাঝের স্থান হলো জান্নাতের অন্তর্ভুক্ত। আর আমার মিম্বরের উপর হলো আমার হাউজ ( বুখারি- ১১৩৮)। কাউসার দিয়ে কোন বস্তু অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ার বুঝায় কাউসার এমন ঝরণা বা নহর , যা হাউজকে পানি দান করবে। বিভিন্ন হাদিসে হাউজ এ কাউসারের পাশাপশি কাউসার নামক ঝর্ণার কথাও বলা হয়েছে। কাউসার নামক ঝর্ণা হাউজকে পানি দান করবে। সুতরাং হাউজ কাউসারের শাখার মত। হাউজের পানির রং সাদা হবে, দুধের মত সাদা। এটি মধুর মত মিষ্টি হবে। তাতে দুটি নালা প্রবাহিত হবে। যা জান্নাত থেকে আসবে। তার একটি স্বর্ণের ও একটি রুপার। মুসলিম শরিফে তার ঘ্রাণের ব্যাপারে বলা হয়েছে ঘ্রাণ হবে মেশকে আম্বর থেকে অধিক সুঘ্রাণ যুক্ত। যে মুমিনের ঈমান- বিশ্বাস পরিপূর্ণ হবে এবং কলাণময় কাজে ( টাকা) ব্যায়কারী হবে, সেই হাইজে কাউসারে সর্বপ্রথম মুহাজিরদের দরিদ্ররা পানি পান করতে যাবে। যারা নিজেদের আত্মাকে ( দ্বীনের পথে ) ব্যায় করছেন । নিজেদের রক্ত ঝড়িয়েছেন এবং আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় নিজেদের মাল খরচ করেছেন।  মহান আল্লাহতায়ালা তাদের বহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অবস্থা বর্ণনা করে বলেন, “ ( এ সম্পদ ) অভাবগ্রস্ত মুহাজিরদের জন্যে যারা নিজেদের ঘরবাড়ী ও সম্পত্তি হতে বহিষ্কৃত  হয়েছে। তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করে এবং আল্লাহ ও তার রাসুল এর সাহায্য করে তারাইতো সত্যবাদী ( হাশর-৮ )”। একটি হাদিসে দরিদ্রদের পানি পান করার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে সর্বপ্রথম তাতে অবতরণ করবেন মুহাজিরদের মধ্যে দরিদ্ররা। যাদের চুল এলোমেলা কাপড় ছিল জীর্ণশীর্ণ যারা উচু এবং সম্ভ্রান্ত পরিবারে বিবাহ করেননি এবং তাদের জন্য ঘর ও দরজা খুলা হতো না ( তিরমিজি-২৪৪৪)। একটি দীর্ঘ হাদিসে বলা হয়েছে- আার আমি তা থেকে মানুষদেরকে প্রতিহত করব। যেমন কোন লোক তার উটের জন্য অন্য লোকের উটকে প্রতিহত করে। অতঃপর একজন সাহাবী বল্লেন, হে আল্লাহতায়ালার নবী। আপনি কি তখন আমাদের চিনবেন ? উত্তরে তিনি বল্লেন, হ্যা তোমাদের এমন কিছু নিদর্শন থাকবে যা অন্যদের থাকবে না ( মুসলিম- ২২৪৪)।  হাউজের পানি পান সম্পর্কে বুখারির বাবুল হাইজ , মুসলিমের কিতাবুত তাফসীল ও মুসনাদে আহমদ ও আবি শায়বাতে ওজুর অঙ্গ জ্বল জ্বল করার কারনে নবিজী তার উম্মতদের চিনবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত - নবিজী (সাঃ) বলেন- আমরা হলাম জাতিসমূহের সবশেষ তবে আমাদেরকেই  প্রথম স্মরণ করা হবে। তখন বলা হবে উম্মী ( আসল ) জাতি ও তাদের নবী কোথায় ? তাই আমরা সর্বশেষ অথচ ( মর্যাদায় ) প্রথম ( ইবনে মাজা)। সালাত কায়েমকারী এবং সঠিকভাবে কুরবানিকারীরা হাউজের পানি পান করতে পারবেন। পবিত্র কুরআনুল কারিমে এব্যাপারে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। “ হে নবী , আমি অবশ্যই তোমাকে ( নিয়ামতের ভান্ডার ) ক্ওাসার দান করেছি। অতএব  ( আমার ভান্ডার ) কাওসার কায়িম করো এবং ( আমারই উদ্দেশ্যে ) কুরবানী করো। নিশ্চয় ( পরিশেষে ) তোমার নিন্দুকেরাই হবে শিকড় কাটা।  ( কাউসার-১-৩ )। সুরা কাউসার নাযিলের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানা যায়-একদিন নবি (সাঃ) সাহাবাদের মাঝে তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলেন তারপর তার মাথা উঠালেন এবং মুচকি হাসলেন। তার সুরা কাউসারে বর্ণিত হাউজের সুসংবাদ দিলেন। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন কাাাউসার কি ? তিনি বল্লেন তা একটি নদী যার ব্যাপারে মহান আল্লাহ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন। এ নদী থেকে হাউজে পানি আসবে। 
রাসুলে আকরাম (সাঃ) বলেন- আমি আমার হাউজে লোকদের অবতরণের স্থানে থাকব। আর আমি আহলে ইয়ামানদেরকে প্রতিহত করতে সহায়তা করতে লাঠি ব্যবহার করবো। অবশেষে তাদের জন্য সজোরে পানি প্রবাহিত হবে ( মুসলিম-২৩০১)। হাদিসের মর্মার্থ  অনুযায়ী মানুষদেরকে হাউজ থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হবে। মুমিন- মুসলিমগণ হাউজের পানি পান করার ক্ষেত্রে অগ্রগামী হবে। রাসুল (সাঃ )এর পর চার খলিফা ও সৎকর্মশীল সাহাবীরা আগে পানি পান করতে পারবেন। নবি করিম (সাঃ) বলেন- অচিরেই তোমরা আমার পর বংশীয় অভিজাত্য ও স্বজনপ্রীতি দেখতে পাবে। সুতরাং তোমরা হাউজে কাইসারে আমার সাথে সাক্ষাত হওয়ার আগ পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ কর ( বুখারি- ৪০৭৫ )। রাসুলে আকরাম (সাঃ) বলেন, আমি হাউজে তোমাদের আগেই পৌঁছে যাব। এবং পানি পান করানোর জন্য অপেক্ষা করবো। যাতে তোমারে মধ্যে লোকদেরকে আমার সামনে পেশ করা যায়। অবশেষে যখন আমি তাদেরকে চিনব তখন তাদেরকে আমার দিকে টেনে বের করা করা হবে। তখন আমি বলব হে আমার রব, এরা আমার সাহাবী। এরা আমার সাহাবী। অতঃপর বলা হবে আপনি জানেনা আপনার পর তারা কী আবিষ্কার করেছে ( মুসনাদে আহমদ- ২৩৮৫) । মুনাফিকরাও হাউজের পানি পান করা থেকে বিরত থাকবে বলে অন্য হাদিসে জানা যায়। মুনাফিকরা যখন মুসলমানদের সাথে মিশত তখন তারা বলত আমরা তোমাদের সাথেই আছি। অন্যদিকে ভেতরে ভেতরে তারা কুফরী মতবাদ পোষণ করত। তাদের সম্পর্কে রাসুল (সাঃ) সতর্ক করে বলতেন, হে আমার উপবেষ্টনকারীরা তোমাদের মধ্যে এমন কতক ব্যক্তি রয়েছে সে কিয়ামতের দিন আমার হাউজ থেকে বিতাড়িত হবে। আর ঐসকল মুনাফিকদের কতককে নবী করিম (সাঃ) এর যুগেই প্রকাশ করা হয়েছে। যেমন ওহুদের ময়দানে তার সাথে যারা বের হয়েছিল অতঃপর যখন তারা রনক্ষেত্রে পৌঁছল । তখন তারা পুনরায় ফিরে আসল। আর তাদের সংখ্যা ছিল ৩০০ জন। যারা রাসুল (সাঃ) এর সুন্নতের অনুসারী , তার পথ ও মতের ধারক ও বাহকরাই নবিজীর কাছে হাউজের পাশে অবস্থান করার সুযোগ পাবে। আল্লাহ আমাদেরকে যা নিষেধ করেছেন সেগুলো থেকে বিরত থাকলে আল্লাহর পথে চল্লে আল্লাহ ছোটখাট ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে আমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাবেন। বিদাতী, মুরতাদ, মুনাফিক হাউজ থেকে পানি পান করতে পারবেন না। আল্লাহ আমাদেরকে যেন নবিজীর হাত থেকে পানি পানের সুযোগ করে দেন । আমিন। ছুম্মা আমিন।

No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.