সড়কপথে আর মৃত্যু চাই না


মমিনুল ইসলাম মোল্লা প্রতিদিনই আমাদের দেশে দুর্ঘটনা ঘটছে। যাদের ভাগ্য ভাল তারা বেচেঁ যাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার বেঁচে থেকেও পঙ্গুত্বের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়ছেন। তাই সড়ক দুর্ঘটনা বাংলাদেশের সাস্থখাতের একটি প্রধান সমস্যা। চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ, নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের স্ত্রী  , সাবেক অর্থমন্ত্রী সাঈফুর রহমান , সচিব ছিদ্দিকুর রহমানসহ আরো অনেকে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।  একটি দুর্ঘটনায় বেঁেচে যাওয়া একজন যাত্রী বল্লেন-তিনি শ্যামলি থেকে সাভার যাচ্ছিলেন। সেদিন বাসে উঠার পরপরই তিনি তন্দ্রা যান। হঠাৎ একটি বিকট শব্দ কানে ভেসে এল। মুহুর্তেই বাসটি পড়ে গেল তুরাগ নদীতে। তিনি বল্লেন বাস থেকে বের হবার কোন পথ তিনি পাচ্ছিলেন না ,তার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। কিছুক্ষণের জন্য হলেও তিনি মৃত্যুর যন্ত্রণা উপভোগ করলেন। তিনি বল্লেন , সমস্ত শক্তি দিয়ে কোন রকমে মাথাটি পানির উপরে ভেসে উঠলাম এসময় একটি উদ্ধারকারী দল এসে আমাকে টেনে তুল্ল্  নিয়ম অনুযায়ী ২০ বছরের পুরনো বাস এবং ২৫ বছরের পুরনো ট্রাক কভার্ড ভ্যান রাস্তায় চলার  কথা নয়। কিন্তু বিআরটিএ এব্যাপারে কিছুদিন তৎপরতা চালালেও অজ্ঞাত কারণে আবার তা বন্ধ হয়ে যায়।নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন-অনেক চালক আছেন যারা হেল্পার থেকে চালক হন। দুর্ঘটনাবিরোধী সংগঠনফুয়ারাবএর আহবায়ক ইকরাম আহমেদ বলেন ,প্রতিটি জেলায় ভোকেশনাল ড্রাইভিং ট্রেনিং সুবিধা বাড়াতে হবে। শিক্ষিত প্রশিক্ষিত গাড়ী চালক তৈরি হলেই সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে। বুয়েটের দুর্ঘটনা রিসার্চ ইনস্টিউটের পরিচালক ডঃসামসুল হক বলেন-দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। তারপর সেটি রোধে এগিয়ে আসতে হবে। ভুয়া লাইসেন্স প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া এন্ড কামউনিটি সার্ভিসের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার মোঃ মাহমুদুর রহমান বলেন-সত্যিকার অর্থে ভুয়া লাইসেন্স শনাক্তকরনের আলাদা কোন  উপায় নেই। সব লাইসেন্সেই বিআরটিএর অনুমোদন থাকে। ঢাকা যানবাহন সমন্বয় বোর্ডের পরিচালক মশিউর রহমান বলেন-দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সবাইকে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে। যেখানে ফুটওভার ব্রিজ আছে তা যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া জনসচেতনতা জরুরি। এক জরিপে দেখা যায় দেশে ঘটে যাওয়া মোট দুর্ঘটনার ৬৪% ঘটে আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোতে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট এসোসিয়েশেনের হিসেব অনুযায়ী ঢাকায় গাড়ী রয়েছে হাজার ৪০০টি এর মধ্যে অধিকাংশই অবৈধ। অবৈধ গাড়ীগুলোই বেশির ভাগ সময় দুর্ঘটনায় পতিত হয়। ডিএমপির সুত্র অনুযায়ী গত ১৫ বছরে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৭০ হাজার। এতে মারা গেছে ১৫ হাজার অন্যদিকে বুয়েটের দুর্ঘটনা রিসার্চ সেলের হিসেব মতে -২০০০ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত দুর্ঘটনা ঘটেছে৪২ হাজার ৪৫৭ টি এর মধ্যে নিহত হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৫ জন। আর আহত হয়েছে ২৯ হাজার ৭৮৭ জন। সরকারি হিসেবে প্রতিদিন মারা যায় ১২ জন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতিবছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ১২ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। আর পঙ্গু হচ্ছে লক্ষাধিক মানুষ। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়-যাত্রী এবং চালকদের ট্রাফিক আইন অনুসরণ না করা , অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের সাথে গাড়ী চালানো , গতিসীমা অনুসরণ না করে বেপরোয়াভাবে চালানো, অতিরিরক্ত যাত্রী মালামাল পরিবহন , অভারটেক করার প্রবনতা চালকদের মোবাইলফোনে কথা বলা বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। পরিবহন মালিক কিংবা ড্রাইভারগণ তাদের দোষ স্বিকার করেন না।  ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন- দুর্ঘটনা হলে বিশিরভাগ ক্ষেত্রে চালকদের দোষ দেয়া হয়। কিন্তু রাস্তার অপ্রশসস্থতা ,ফুটফাত দখল , এসব কারণেও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। চালকদের পেশাগত এবং একাডেমিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলে দুর্ঘটনা অনেক কমে যাবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের স্বজনরা নিজেদের কষ্ট ভাগাভাগি করে নিতে গড়ে তুলেছেনফ্যামিলি ইউনাইটেড এগেইনস্ট রোড একসিডেন্টনামক একটি সংগঠন। সংগঠন থেকে দোষী ড্রাইভারদের ফাঁসির দাবী তোলেন। দুর্ঘটনায় নিহত উইলস লিটল ফ্ল্ওায়ার স্কুলের ছাত্র হামীমের বাবা শেখ মোতালেব বলেন , আমার ছেলের ঘাতক বাস চালক মাস আগে ছাড়া পেয়েছে। এসব ঘাতকদের বিরুদ্ধে কঠিন আইনী ব্যবস্থা  না থাকায় নিয়মিত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। বর্তমান আইন পরিবর্তন প্রয়োজন। নিহত রওশন আরা বেগমের স্বামী জানান, শুধু সচেতন হলেই চলবেনা। যথাযথ আইন প্রনয়ন তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
লেখক: মমিনুল ইসলাম মোল্লা,প্রভাষক, ক্যাম্পেনার সিডিএলজি এবং সহকারী সম্পাদক , (দৃষ্টান্ত ডট কম), কুমিল্লা,

No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.